শেষ পর্ব
দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেই ক্যাডারের মতো হুমকি দেন সালাম
- আপলোড সময় : ১৮-১২-২০২৪ ১২:২২:১৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-১২-২০২৪ ১২:২২:১৩ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি ::
শাল্লায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের বরাদ্দ থেকে ৪-৫ জন শিক্ষক সিন্ডিকেটকে নিয়ে আব্দুস সালাম সর্বশেষ প্রতি বরাদ্দ থেকে হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য, পুরনো ভবন নিলাম ছাড়াই বিক্রি, স্লিপ, ক্ষুদ্র মেরামত, বদলিসহ নানা বিষয়ে তথ্য চাইতে গিয়ে হত্যার হুমকি পেয়েছেন তিনজন স্থানীয় সাংবাদিক। ঘুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগপত্র ও ঘুষ চাওয়ার অডিও রেকর্ডসহ সরেজমিন তথ্য নিয়ে সংবাদ করায় আইসিটি আইনে আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষক সিন্ডিকেটকে সাক্ষী রেখে মামলা দিয়েছেন তিনি। মন্তব্য করেছেন ‘সাংবাদিদের কিভাবে সাইজ করতে হয় আমি জানি’। তার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। চাকুরি করতে এসে তার এমন ক্যাডারসুলভ ঘটনায় ছাত্র জনতা সালামের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা। যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে ঘুষের টাকায় তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন এমন কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে তালিকাভুক্ত একাধিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সালামের কার্যালয় সরকারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিতভাবে গত অক্টোবর মাসে তথ্য চাইতে যান শাল্লা উপজেলার দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিনিধি জয়ন্ত সেন, দৈনিক ইনকিলাবের উপজেলা প্রতিনিধি আমির হোসেন ও সাংবাদিক পাভেল আহমদ। আব্দুস সালাম তথ্য না দিয়ে তাদের হুমকি ধমকি দিয়ে অপমানিত করে বিদায় করেন। পরে সাংবাদিকদের মারার জন্য ‘তারেক হাসান ও রাব্বুল হোসাইন’ নামের দুই যুবককে দায়িত্ব দেন। ওই দুই যুবক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন আব্দুস সালাম।
সাংবাদিক আমির হোসেন গত ২৪ অক্টোবর নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। আলাদাভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক শিক্ষার্থী গত ২১ অক্টোবর শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুব জামান গত ২৪ অক্টোবর তদন্ত পরিচালনা করেন। গত ২২ অক্টোবর সাংবাদিকদের হত্যার জন্য লোক নিয়োগের প্রতিবাদে স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এই ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠলে শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষক সিন্ডিকেটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ডাক দেন। এ বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং জেলা শিক্ষা অফিসার মোহন দাস উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামকে বাড়াবাড়ি না করতে নির্দেশনা দেন। ফলে গত ২৪ অক্টোবর চাকুরিবিধি লঙ্ঘন করে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া সালাম তার কর্মসূচি করতে পারেননি। এভাবে তার দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢাকতে তিনি সাংবাদিকদের হুমকি-ধমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি ও মামলা মোকদ্দমা অব্যাহত রেখেছেন।
জানা গেছে, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের মানসিক অত্যাচারে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষক অঞ্জলি রানী দাস। তার কাছে ঘুষ চাওয়ার অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের কাছে এসে পৌঁছলে সালাম ওই শিক্ষিকার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। তাকে মানসিক নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় তার স্বামী তন্ময় দেব সালামের বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণের লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। লিখিত অভিযোগসহ বিভিন্ন খাত থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক উত্তর পূর্ব ও দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য ও শিক্ষিকার কাছে ঘুষ চাওয়ার অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ না করতে সালাম শিক্ষক সিন্ডিকেটের নেতাকে দিয়ে অনুরোধ করে ঘুষের প্রস্তাব দেন সালাম। সালাম নিজে সুনামগঞ্জ শহরের পানসী রেস্টুরেন্টে এসে এক সাংবাদিককে জোর করে টাকা দিতে চাইলে তাকে ধমক দেন ওই সাংবাদিক। পরে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সালাম তার পক্ষের ৪-৫জন শিক্ষক সিন্ডিকেটের নেতাকে সাক্ষী রেখে ও তার তৎকালীন খুটির জোর পুলিশ প্রধানের ভাই আল-আমিন চৌধুরীর সহযোগিতায় সাংবাদিক শামস শামীম ও জয়ন্ত সেনের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলার আবেদন করেন। এভাবে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ ও দুর্নীতির তথ্য উন্মোচিত হলে ক্ষুব্ধ হন সালাম। মামলা ও হামলার হুমকি সাংবাদিকদের।
সাংবাদিক আমির হোসাইন বলেন, আমরা কয়েকজন শিক্ষা অফিসার সালামে কাছে নির্দিষ্ট তথ্য চাইতে গেলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তার দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে এই ভয়ে তিনি দুই যুবককে আমাকে মারার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তারা বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়েছে। আমি এ বিষয় থানায় অভিযোগ করেছি। এখনো আমি নিরাপত্তাহীন আছি। কেউ তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে গেলেই ঘুষের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে চান। না পারলে হুমকি ও মামলা দেন।
সাংবাদিক জয়ন্ত সেন বলেন, আব্দুস সালাম যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই দুর্নীতির চিহ্ন রেখে এসেছেন। তবে সবখানেই তার বিরুদ্ধে শিক্ষক ও অভিভাবকরা সোচ্চার হন। দুর্নীতির অভিযোগ করেন। কিন্তু শাল্লায় ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ করতে পারেননা ৪-৫ জনের শিক্ষক সিন্ডিকেট নেতার কারণে। এ কারণে সালাম বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। তিনি ঘুষ নিয়েছেন নানা খাত থেকে এমন একাধিক অডিও রেকর্ড ভুক্তভোগীরা আমাদেরকে দিয়েছেন। দুর্নীতির তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় মন্ত্রণালয় তার চাকরিচ্যুতি করতে চাইলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে দিয়ে তিনি রেহাই পান বলে বিষয়টি ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে।
সুনামগঞ্জের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুব জামান বলেন, আমি সালামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত করেছি। সাংবাদিকককে হুমকি ধমকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে সালাম গাজিপুরে বদলির আদেশ নিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বলেন, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম শাল্লায় পানিশমেন্ট বদলি হয়ে এসেছিলেন। তার বিরুদ্ধে শাল্লার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করার পর তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ